করোনাকালে শিক্ষার্থীরা এই সাতটি বিষয়ে মনোযোগী হবে। তাহলে তাদের অবসরের সময়টি কাজে লাগবে বলে মনে করেন তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ আবু ইউছুফ খান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সময়গুলো মহা মূল্যবান। তারা রুটিন মোতাবেক নিজেদের সময়ের কদর করবে। অবসরে শিক্ষার্থীদের জন্য ধারাবাহিক পরামর্শ প্রকাশের অংশ হিসেবে আজ থাকছে রাজধানীর মীরহাজিরবাগ, কাজীবাড়ী, যাত্রাবাড়ীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ আবু ইউছুফ খানের শিক্ষা পরামর্শ। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।।
তিনি বলেন, সাধারণত আমি শিক্ষার্থীদের সাতটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই করোনাকালীন শিক্ষার্থীরা যেন নষ্ট না হয়ে যায় এজন্য করোনার শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নোট করে দিয়েছিলাম কিছু বিষয়। সেই বিষয়গুলো আমি আপনার মাধ্যমে তুলে ধরছি।
১ম নম্বর: শিক্ষার্থীদের একটি ব্যক্তিগত রুটিন থাকবে। যেটা ফজরের আধাঘন্টা আগ থেকে নিয়ে রাত এগারোটা পর্যন্ত সময়ের বিবরণ থাকবে। সে রুটিন মোতাবেক সে জীবন পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে আমরা অভিভাবকদের বলি, তারা যেন সার্বক্ষণিক শিক্ষার্থীদের প্রতি নজর রাখেন। তারা যে রুটিন তৈরি করেছে সেই রুটিন মোতাবেক যেন নিজের সন্তানকে পরিচালনা করেন।
২য় নম্বর: প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কিছু নিয়ম বা একটি নির্দিষ্ট কাইটেরিয়া থাকে। বিশেষত এখন সরকার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য এসাইন্টমেন্ট প্রকাশ করেছে। নির্ধারিত এসাইন্টমেন্টগুলো তারা পূর্ণ করবে। বিষয়ভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট ও সিলেবাসকে সামনে রেখে সে অনুযায়ী পড়াশোনা করবে।
৩য় নম্বর: হাতের লেখা সুন্দর করতে হবে। করোনাকালে তারা হাতের লেখার বেশি বেশি প্র্যাকটিস করবে। আমরা বলে থাকি যে, মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য চার ধরণের লেখা সুন্দর করতে হয়। ক. বাংলা, খ. ইংরেজি, গ. আরবি ঘ. বিজ্ঞান ও গণিত এর বিশেষ যে সূত্রসমূহ আছে, সেগুলো লকডাউনে বসে বসে আত্মস্ত করবে।
৪র্থ নম্বর: সরকার যেহেতু অনলাইনে সংসদ টিভিতে ক্লাস নিচ্ছে। সে অনলাইন ক্লাসেও নিয়মিত অংশ নেবে।
৫ম নম্বর: এখনো যারা ইন্টারমিডিয়েট বা এসএসসি লেভেলে আছে, তাদের অনেক রচনা মুখস্থ করতে হয়। অনেক রচনাধর্মী লেখা তাদের লিখতে হয়। সেই রচনাধর্মী প্রশ্নগুলো তারা ভালো করে আত্মস্থ করবে। এক্ষেত্রে সে নিজের জন্য একটি নোট তৈরি করবে। বাংলাবাজারের নোট কিনে পড়বে না।
বরং সে হাতে একটি নোট তৈরি করবে। যে নোটটা তার পড়াশোনার জীবনে অনেক কাজে দিবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমাদের এখানে যারা ভালো স্টুডেন্ট আছে, তারা নিজেরা নোট তৈরি করে পড়াশুনা করেছে। নোট তৈরির পর আমাদের দেখালে আমরা সেগুলো সংশোধন করে দেই। এতে দেখা যায় যে তাদের রেজাল্টও খুব ভালো আসে। পরীক্ষায় তারা পুর্ণ নম্বর পায়।
নাম্বারে পায়ে জন্য যেসব যে সমস্ত বিষয়গুলোতে নোট আছে বা নোট করার মত যে রচনামূলক প্রশ্ন গুলো রয়েছে হতে এখন সময় কম তারপরও সেগুলো দেখে আর দশটি প্রশ্ন কমার্স কমছে নোট করে রাখবে আর
৬ষ্ঠ নম্বর: এখন তো প্রত্যেক বিষয়ে MCQ বা নৈব্যক্তিক প্রশ্ন রয়েছে। এই নৈব্যক্তিক প্রশ্নগুলো খুব ভালো করে আত্মস্থ করবে। এগুলো কি কি হতে পারে তা সে সংক্ষিপ্তভাবে নোট করবে। এরপর সেগুলোর উত্তর লিখবে ও মুখস্ত করবে।
৭ম নম্বর: শিক্ষার্থীরা যেহেতু বর্তমানে লকডাউনের কারণে বাড়িতে আছে। তাই এই মুহূর্তে তারা তাদের পিতা-মাতার খেদমত করবে। পিতা মাতার সেবা যত্ন করবে। কেননা পিতা-মাতার সন্তুষ্টি মানে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি। তাই পারিবারিক বিভিন্ন কাজে তারা অংশগ্রহণ করবে। তার পিতা-মাতা যে সার্বক্ষণিক কষ্ট করে, সন্তানরা পিতা-মাতা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে তাদের সেই কষ্টটা অনুভব করতে পারে না। বুঝতে পারে না। এখন যেহেতু তারা তাদের কাছে থাকার সুযোগ পেয়েছে, তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পিতা-মাতার খেদমত বেশি বেশি করবে।
সবশেষ আমি বলবো, আমরা যেহেতু আল্লাহ তাআলার বান্দা। আমাদের জন্য আল্লাহর বিধিবিধান রয়েছে। সেগুলো পালন করতে হবে। বিশেষত ফরজ-ওয়াজিব যেনো কোনোভাবেই ছুটে না যায়-সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আর বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের যেসব শিক্ষার্থী আছে, তারা অবশ্যই এই লকডাউনে মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করবে। বিশেষত সমাজে যারা অসহায় দরিদ্র আছে, তাদের সেবা-যত্ন করবে। নিজেদের সামর্থ্য মোতাবেক তাদের খোঁজ খবর নিবে ও সাহায্য সহযোগিতা করবে।